আহাম্মকের কথায় প্রতিবাদ করোনা,কেননা শেষে তুমি নিজেই আহাম্মক বনে যাবে।মেয়ে-মানুষের কান্নার পেছনে সবসময়ে কারণ বা যুক্তি থাকেনা।সর্বাপেক্ষা দুর্বল ব্যক্তি সে যার কোন বন্ধু নেই।ছলনা ও অভিনয়ে মেয়েদের সাথে পুরুষ কখনই পারেনা।মেয়ে মানুষ যদি ভক্তিতে কেঁদে গড়াগড়ি দেয়,তবুও কোনোমতে তাকে বিশ্বাস করবে না।

10/18/2014

চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্য



চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্য
চাঁদপুর- এর কচুয়া, হাজীগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ ও শাহরাস্তি উপজেলার মেহের শ্রীপুর অঞ্চলটি সবচেয়ে প্রাচীন। বাংলার সুলতান ফখরউদ্দিন মুবারক শাহ্ এর রাজত্বকালে (১৩৩৮-১৩৪৯) দেওয়ান ফিরুজ খান লস্কর এর খনন করা দীঘির পশ্চিম পাড়ে ৭৭৫ হিজরীতে একটি মসজিদ স্থাপন করা হয়। এ মসজিদই সম্ভবত বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার সর্ব প্রাচীন মসজিদ। এটি হাজীগঞ্জ উপজেলার সামান্য উত্তরে পিরোজপুর গ্রামে অবস্থিত। চাঁদপুর জেলার ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাজীগঞ্জ এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। হাজী মনিরুদ্দিন শাহ (মনাই গাজী) এর হাজী দোকান এর সুখ্যাতিতে গড়ে উঠা বাজার থেকে হাজীগঞ্জ শব্দের উৎপত্তি ঘটে। জেলার ধর্মীর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যমত হাজীগঞ্জে অবস্থিত ঐতিহাসিক বড় মসজিদ স্থাপিত হয় ১৩০০ বঙ্গাব্দে (১৮৯৩ খ্রিঃ)। হাজীগঞ্জের ৬ মাইল পশ্চিমে অলিপুর গ্রাম। এ গ্রামে দুটি প্রাচীন মসজিদ আছে। একটি শাহ সুজার আমলে নির্মিত সুজা মসজিদ। অপরটি মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে নির্মিত আলমগীর মসজিদ নামে পরিচিত। এটি নির্মাণ করেছিলেন ১৩৭০ খ্রিঃ মোঃ আবদুল্লাহ। আলীগঞ্জের মাদা্হ খাঁ নামের এক দরবেশের নামে ১৭৩৮ খ্রিঃ স্থাপিত হয় বর্তমান মাদা্হ খাঁ মসজিদ।


১৩৫১ সালে মেহের শ্রীপুর অঞ্চলে এসেছিলেন বিখ্যাত আউলিয়া হযরত রাস্তি শাহ। ১৩৮৮ খ্রিঃ তিনি ইন্তেকাল করেন। মেহের শ্রীপুর-এ তাঁর মাজার অবস্থিত। বিখ্যাত হিন্দু সাধক সর্বানন্দ ঠাকুর এ মেহেরেই দশ মহাবিদ্যা সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। সিদ্ধি লাভের স্থানটিতেই গড়ে উঠেছে মেহের কালবাড়ী। হযরত রাস্তি শাহ্ এর নামেই এ অঞ্চলের নাম হয় শাহ্রাস্তি। এটিই এখন শাহ্রাস্তি উপজেলা নামে পরিচিত।

বাঙালি জাতির অনেক উৎসব আয়োজনের সঙ্গে মিশে আছে মেলা বা আড়ং- এর ঐতিহ্য। চাঁদপুরেও বেশ কিছু প্রাচীন ও স্বাধীনতাত্তোর কালে সৃষ্ট মেলার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। উপজেলা ভিত্তিক উল্লেখযোগ্য মেলাসমূহের বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলাঃ
বিজয় দিবসকে চির স্মরনীয় করে রাখার জন্য চাঁদপুর হাসান আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখস্থ হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলা হয় প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহে আরম্ভ হয়। চলে এক মাস। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর শহর পাকবাহিনী মুক্ত হয়। ১৯৯২ সালে ৮ ডিসেম্বর বিজয় মেলা আরম্ভ হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব রাখা এবং বিশিষ্ট বিদগ্ধ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণজানানো হয়। তাঁরা মেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইতিহাস জনসমক্ষে তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় শিশু খেলনা হতে আরম্ভ করে মহিলাদের বিভিন্ন তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী পাওয়া যায়। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার নতুন কমিটি গঠন করা হয়। বিজয় মেলা কমিটিই এ মেলার আয়োজক। 
মেহেরনের রথের মেলাঃ
প্রতি বছর মতলবের মেহেরন হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা উপলক্ষে ঐতিহাসিক মেহেরন রাধকৃঞ্চ মন্দির প্রাঙ্গuঁণ মেলা বসে। প্রতি বৎসর জুলাই মাসে রথযাত্রা কমিটি রথ মেলা আয়োজন করে থাকে। মেলায় বিভিন্ন রকমের শিল্পজাত দ্রব্য সামগ্রী যেমন মাটির পুতুল, হাঁড়ি পাতিল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কাঠ, বাঁশ ও বেতের তৈরী জিনিস পত্র পাওয়া যায়।
 ঐতিহ্যবাহী লেংটার মেলা ও অন্যান্য মেলাঃ
মতলব উত্তর উপজেলায় উত্তরাংশ অর্থাৎ মেঘনা ধনাগোদা নদী বেষ্টিত দ্বীপাঞ্চল  (মেঘনা নদীর পশ্চিমাংশসহ) ২০০০ সালে ‘‘মতলব উত্তর’’ উপজেলা নামে নতুন উপজেলা গঠিত হলেও শত শত বছর ধরে এই অঞ্চলে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়। গ্রাম বা সমাজ নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের উদ্যোগে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিছু কিছু মেলা অনুষ্ঠিত হয় পীর, আওলিয়া,  দরবেশ, ফকিরদের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। এদের মধ্যে লেংটা বাবা (সোলেমান শাহ)র মাজার বদর পুর পুলিশ ফকিরের দরগাহ (গজরা), আইন উদ্দিন শাহর মাজার, বড় হলদিয়া মেলা অন্যতম। সবচেয়ে  সুপরিচিত হলো লেংটা বাবার মাজারে অনুষ্ঠিত মেলা। সারা দেশ থেকে লেংটা ভক্তবৃন্দ এখানে আসেন। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের ১৮-২১ তারিখ পর্যন্ত ০৪ দিন এবং চৈত্র মাসের ১৫-২২ তারিখ পর্যন্ত এই  ৮ দিন মেলা চলে। মেলায় যাত্রা ও আকর্ষণীয় সার্কাস দেখানো হয়।
           মেলায় তাঁত, কামার-কুমারদের তৈরী বিভিন্ন দ্রবাদি কেনা বেচা হয় এবং বিভিন্ন প্রকার খেলনা ও হরেক রকমের খাবার পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৩০ শে চৈত্র এবং পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এলাকার হাট/ বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ সকল মেলায় বিভিন্ন প্রকার খাবার, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য ও খেলনা পাওয়া যায়। বহু পূর্বে রাঢ়ীকান্দি গ্রামে মেলা হতো এবং এ মেলায় ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এ মেলার প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে মেলাটি বটগাছের নীচে অনুষ্ঠিত হতো।

চাঁদপুর জেলার লোকশিল্প ও চারুকলাসমূহঃ
কুমারঃ এ সম্প্রদায় আর আগের মত তাদের পূর্ব পুরুষদের ব্যবসা আকঁড়িয়ে নেই। পূর্বের ন্যায় কুমার সম্প্রদায়ের লোকদের হাড়ি-কলসি বানানো দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না। সিলভারের তৈজস সামগ্রী তাঁদের তৈরী পণ্যের স্থান দখল করায় অনেকে তাঁদের পূর্ব পুরুষদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে  পড়েছে। চাঁদপুর সদরের তবপুরচন্ডী ইউনিয়নে এবং পুরান বাজারে এখনও বেশ কিছু কুমার রয়েছে।

কামারঃ কামার সম্প্রদায় এখনও তাদের পূর্ব পুরুষদের ব্যবসা আকঁড়িয়ে আছে। তাদের তৈরি দা, বটি বর্তমানে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে সমানভাবে সমাদৃত। অল্প সংখ্যক কামার সম্প্রদায়ের লোক তাদের পূর্ব পুরুষদের পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে নেয়া

No comments:

Post a Comment