আহাম্মকের কথায় প্রতিবাদ করোনা,কেননা শেষে তুমি নিজেই আহাম্মক বনে যাবে।মেয়ে-মানুষের কান্নার পেছনে সবসময়ে কারণ বা যুক্তি থাকেনা।সর্বাপেক্ষা দুর্বল ব্যক্তি সে যার কোন বন্ধু নেই।ছলনা ও অভিনয়ে মেয়েদের সাথে পুরুষ কখনই পারেনা।মেয়ে মানুষ যদি ভক্তিতে কেঁদে গড়াগড়ি দেয়,তবুও কোনোমতে তাকে বিশ্বাস করবে না।

10/25/2014

রাঙ্গামাটি জেলার ঐতিহ্য



রাঙ্গামাটি জেলার ঐতিহ্য
নৃ-বৈচিত্র্যে অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত পার্বত্যাঞ্চলে। এখানে দীর্ঘদিন ধরে এগার ভাষাভষীর ১২টি জাতিসত্ত্বা সহাবস্থান করছে। এমন বৈচিত্র্যে ঐক্যতান বিশ্বের কোন দেশে চোখে পড়ে না। এ পাহাড়ি ভূ-ভাগে এতগুলো জাতিসত্ত্বা কখন ,কিভাবে অভিবাসন করেছে তা বলা মুশকিল। কোন জাতিসত্তার কোন লিখিত দলিল দস্তাবেজ না থাকায় এতদঞ্চলের সঠিক ইতিহাস জানার কোন সুযোগ নেই। তবে এসব জনজাতিগুলোর রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। তারা সেগুলোকে যুগ যুগ ধরে সযতনে লালন করে আসছে। 
ভাষা: 
জনবৈচিত্র্যর এক অনন্য মিলন ক্ষেত্র রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা । এখানে দশভাষাভাষি এগারটি জাতি সত্ত্বার বসবাস রয়েছে। এরা হচ্ছে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, চাক, খিয়াং, খুমী, পাংখোয়া, বোম ও লুসাই। ভাষাও সংস্কৃতির বিচারে এক জাতিসত্ত্বা অন্য জাতিসত্ত্বা থেকে স্বতন্ত্র।নৃতাত্ত্বিক বিচারে তাদের সকলেই মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠিভুক্ত। সংখ্যাগরিষ্ঠতারদিক থেকে চাকমাহচ্ছে প্রধান জাতিসত্ত্বা। তাদের পরেই মারমা, ত্রিপুরা ওতঞ্চঙ্গ্যাদের অবস্থান। অন্যান্য সাতটি জাতিসত্ত্বার সংখ্যা অতি নগন্য।তারা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার মোট জনসংখ্যার ১.২৭% মাত্র।
এতদঞ্চলেবসবাসরত প্রত্যেক জাতিসত্ত্বার রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। এদের মধ্যেচাকমাদের রয়েছে নিজস্ব বর্ণমালা। মারমারা বর্মী বর্ণমালায় লেখার কাজ চালায়।তাদের লোক সাহিত্যও বেশ সমৃদ্ধ। লোক সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে প্রবাদ-প্রবচন(ডাগকধা), ধাঁধাঁ (বানা), লোককাহিনী, ছড়া উভগীদ ইত্যাদি। এগুলোর ব্যবহার ওরচনা শৈলী বেশ চমকপ্রদ। লোককাহিনীর বুননেও উৎকর্ষতার ছাপ রয়েছে। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা আধুনিক সাহিত্য চর্চায়ও অনেকটা এগিয়েছে। তারা নিজেদেরভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনা করছে।
সংস্কৃতি:
এতদঞ্চলেরআদিবাসী সংস্কৃতি অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং বৈচিত্রময়। এখানকার ১১টি জাতিসত্তার বিশাল সংস্কৃতির ভান্ডার রয়েছে।তারা পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতির ধারাপরম মমতায় যুগ যুগ ধরে রক্ষা করে চলেছে। আধুনিক শিক্ষা, মোঘল-ইংরেজ-বাঙালিসংস্কৃতির ছোঁয়া, নগরায়ন ও আকাশ সংস্কৃতি আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকেযথেষ্ট প্রভাবিত করেছে তা ঠিক। এতে তাদের ভাষা, পোশাক, আহার ও জীবন ধারায়পরিবর্তনও লক্ষনীয়। তা সত্ত্বেও সংস্কৃতির বিচারে তাদের এখনো আলাদাভাবেচেনা সম্ভব। এ ধারা আরো অনেকদিন অব্যাহত থাকবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
পার্বত্যউপজাতি জনগোষ্ঠির মধ্যে বৌদ্ধ, সনাতন, খ্রিস্টান ও ক্রামা ধর্ম প্রচলিত।এখানে আচার সংস্কার বিষয়ে বেশ কিছু টোটেমিক ধারণা প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরেরপুরহিতদের পাশাপাশি পাহাড়ি ওঝা, বৈদ্য ও তান্ত্রিকদের প্রভাবও লক্ষ করাযায়। সমাজে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন রীতিনীতি মেনে চলে সবাই। লোক সংস্কার ও লোকবিশ্বাসকে মনে প্রাণে ধারণ করে সেটা থেকে শুভ-অশুভকে বিচার করা হয় কখনওকখনও। তবে বর্তমানে কুসংস্কারগুলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
পোশাক-পরিচ্ছদও অলংকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার্বত্য আদিবাসীদের শিল্পমননশীলতার পরিচয়মেলে। চাকমাদের পিনন-খাদি, মারমাদের লুঙ্গি-থামি, ত্রিপুরাদের রিনাই-রিসাউৎকৃষ্ট শিল্পকলার পরিচয় বহন করে। সুদূর অতীতে মেয়েদের শুধু রূপার গহনাপরতে দেখা যেত। লুসাই, পাংখো ও বম মেয়েরা পরতো   বাঁশ-কাঠের অলংকার। আবার কেউকেউ পুঁতির মালা কিংবা মুদ্রার মালা   পরতো। কানে পরতো দুল আর ঝুমকো।পুরুষরা পরতো মালকোচা ধুতি এবং লম্বা হাতা জামা। বর্তমানে পেশাক-পরিচ্ছদেবেশ পরিবর্তন এসেছে। এখন সকল জাতিসত্তার মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি-ব্লাউজ এবং পুরুষদের পেন্ট-শার্ট পরতে দেখা যায়।

পার্বত্যচট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যারা বর্ষ বিদায় ও নববর্ষের আগমণ উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী এউৎসব পালন করে। এ বিষয়ে ঐতিহ্যনামক কনটেন্টে বর্ণনা করা হয়েছে।চাকমাদের হাল পালানীউৎসব কৃষি ভিত্তিক। এ সময় হালচাষ বন্ধ রাখা হয়ঋতুমতী জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে। মারমাদেরছোয়াইংদগ্রী লং পোয়েহ রথটানাউল্লেখযোগ্য। খিয়াং উপজাতিদের প্রধানউৎসব হেনেই। আর লুসাইদের নবান্ন উৎসবের নাম চাপ চার কুট। ম্রোদেররয়েছে গো-হত্যাউৎসব। বর্তমানে কঠিন চীবর দানপ্রধান ধর্মীয় উৎসবেপরিণত হয়েছে।
চাকমাদেরজনপ্রিয় নৃত্য হচ্ছে জুমনৃত্য। ত্রিপুরাদের গরাইয়া নৃত্যবৈসুক উৎসবেঅনুষ্ঠিত হয়। লুসাইদের লোকনৃত্যের মধ্যে বাঁশ নৃত্যইতোমধ্যে জনপ্রিয়তালাভ করেছে। বম ও পাংখো সম্প্রদায়ের মধ্যে এ নৃত্যের প্রচলন দেখা যায়।এতদঞ্চলের নৃত্য শিল্পীরা দেশে-বিদেশে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে। উপজাতীয়নৃত্য শিল্পীদের জুম নৃত্য’, ‘গরাইয়া নৃত্য’, ‘বাঁশ নৃত্যবোতল নৃত্যজাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছে।
নিম্নে কটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব, নৃত্য ও পূজার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো মাত্র।
বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুকঃ
চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের প্রধান ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব হচ্ছে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক। এ লোকজ উৎসব চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন ও বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটি নিয়ে তিনদিনব্যাপী পালিত হয়। চাকমা সমাজে এ তিন দিনকে যথাক্রমে ফুলবিজু, মূল বিজু এবং গজ্জ্যেপজ্জ্যে বলা হয়। মারমা সমাজে দিনগুলোকে যথাক্রমে পাইং ছোয়াই, সাংগ্রাই আফ ও সাংগ্রাই আপ্যাইং এবং ত্রিপুরা সমাজে হারিবৈসুক, বৈসুকমা ও বিসিকাতাল বলা হয়। উৎসবের প্রথম দিন ঘরদোর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়, ছেলে-মেয়েরা ভোরে ফুল তোলে এবং ঘর সাজায় আর কিশোর-কিশোরীরা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের স্নান করায়। উৎসবের দ্বিতীয় প্রত্যেক ঘরে রুচিসম্মত ও সুস্বাদু খাবাবের আয়োজন করা হয়। ঘরের দরোজা থাকে সকলের জন্য উম্মুক্ত। খাবারের মধ্যে বিভিন্ন সবজি মিশিয়ে রান্না করাপাজন’ হচ্ছে অন্যতম। এ দিনেই মদের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়ে থাকে। উৎসবের শেষ দিনে চাকমারা বাড়িতে ভাল খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করে। সাম্প্রতিক সময়ে এ দিনে বিহারে বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। অনেকেই আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবরও নিয়ে থাকেন। মারমারা এ দিনে ‘রিলং পোয়েহ্বা Water Festival-এর আয়োজন করে। ত্রিপুরারাদের বিশেষ আয়োজন হচ্ছে ‘গড়াইয়া নৃত্য
রাজ পুন্যাহ্ঃ
উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ‘রাজপ্রথাবিলুপ্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী ‘রাজাগণ’ এখনো সামাজিক প্রধান হিসেবে শাসন কাজ পরিচালনা করছেন। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ১৭৭টি মৌজা নিয়ে ‘চাকমা সার্কেল’ গঠিত।রাজ পুন্যাহ্হলো এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে ‘চাকমা রাজারাজ দরবারে আনুষ্ঠানিকভাবে বসেন এবং হেডম্যানদের নিকট হতে খাজনা আদায় করেন। পূর্বে এ অনুষ্ঠান প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হত। এ অনুষ্ঠানে রাজার অধীনস্থ হেডম্যান ও কার্বারীগণ খাজনা পরিশোধের পাশাপাশি রাজাকে বিভিন্ন উপটোকন অর্পন করেন।

No comments:

Post a Comment