খাগড়াছড়ি জেলাঃ
পাহাড়, ছোট ছোট
নদী, ছড়া
ও সমতল
ভূমি মিলে
এটি একটি
অপরূপ সৌন্দর্য্যমন্ডিত
ঢেউ খেলানো
এ জেলা। চেঙ্গী,
মাইনী ও
ফেণী প্রভৃতি
এ জেলার
উল্লেখযোগ্য নদী। এ ছাড়াও
এতে রয়েছে
৩৩৬৮টি পুকুর,
জলাশয় ও
দীঘি যার
৬৭% খাস।
ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা
যায়, খ্রিষ্টীয়
ষষ্ঠ শতাব্দী
থেকে চতুর্দশ
শতাব্দী পর্যন্ত
অত্র এলাকাটি
কখনো ত্রিপুরা,
কখনো বা
আরকান রাজন্যবর্গ
দ্বারা শাসিত
হয়েছে।
তন্মধ্যে ৫৯০
হতে ৯৫৩
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩৬৩ বছর
ধরে ত্রিপুরা
রাজাগণ বংশপরম্পরায়
পার্বত্য চট্টগ্রাম
(খাগড়াছড়িসহ) ও চট্টগ্রাম শাসন করে। অতঃপর
৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ
হতে ১২৪০
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আরকান রাজাগণ ২৯৭
বছরব্যাপী এ এলাকা শাসন করলেও
তদ্পরবর্তীতে ১০২ বছরব্যাপী (১৩৪২ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত) পুনরায়
ত্রিপুরা রাজাগণ
এ এলাকার
কর্তৃত্ব করেন।
দর্শনীয়
স্থানঃ
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রঃ
ঐশ্বর্যময় সৌন্দর্য্যের অহঙ্কার
খাগড়াছড়ি শহরের
প্রবেশ পথেই
চোখে পড়বে
আলুটিলা পর্যটন
কেন্দ্র।
আলুটিলা বাংলাদেশের
একটি অন্যতম
ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটন স্পট। আর তাই এর
সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে খাগড়াছড়ির সাবেক
জেলা প্রশাসক
একটি কবিতা
লিখেছিলেন যা অনেকটা এ রকম-‘‘ক্লান্ত পথিক
ক্ষণেক বসিও
আলুটিলার বটমূলে,
নয়ন ভরিয়া
দেখিও মোরে
চেঙ্গী নদীর
কোলে।’’
এ পর্যটন
কেন্দ্রে পার্বত্য
জেলা পরিষদ
ও পার্বত্য
চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে পর্যবেক্ষণ
টাওয়ার, বিশ্রাম
কক্ষ ও
বসার সু-ব্যবস্থাসহ গুহায়
যাওয়ার পথে
সিঁড়ি করা
হয়েছে।
এ টিলার
চূড়ায় দাঁড়ালে
শহরের ছোট-খাট ভবন,
বৃক্ষ শোভিত
পাহাড়, চেঙ্গী
নদীর প্রবাহ
ও আকাশের
আল্পনা মনকে
অপার্থিব মুগ্ধতায়
ভরে তোলে। প্রাকৃতিক
নৈসর্গের এ
স্থানটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার
লক্ষ্যে সরকার
এখানে ইকোপার্ক
স্থাপনের কার্যক্রম
গ্রহণ করেছে। পর্যবেক্ষণ
টাওয়ার থেকে
খাগড়াছড়িকে দেখে দার্জিলিংয়ের সাথে তুলনা
করতে পারেন। প্রতিদিন
শত শত
পর্যটক এখানে
বনভোজন করতে
কিংবা অবসরে
বেড়াতে আসেন। পর্যটকদের
নিরাপত্তার জন্য এ স্থানে একটি
অস্থায়ী পুলিশ
ক্যাম্পও আছে।
আলুটিলার ঝর্ণা
বা রিছাং ঝর্ণাঃ
জেলা সদর থেকে
আলুটিলা পেরিয়ে
সামান্য পশ্চিমে
মূল রাস্তা
থেকে উত্তরে
ঝর্ণা স্থানের
দূরত্ব সাকুল্যে
প্রায় ১১কিঃ
মিঃ।
ঝর্ণার সমগ্র
যাত্রা পথটাই
দারুণ রোমাঞ্চকর। যাত্রাপথে
দূরের উঁচু-নীচু সবুজ
পাহাড়, বুনোঝোঁপ,
নামহীন রঙ্গীন
বুনোফুলের নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য্য যে
কাউকে এক
কল্পনার রাজ্যে
নিয়ে যায়।ঝর্ণার
কাছে গেলে
এক পবিত্র
স্নিগ্ধতায় দেহমন ভরে উঠে। ২৫-৩০
হাত উঁচু
পাহাড় থেকে
আছড়ে পড়ছে
ঝর্ণার জলরাশি,
ঢালু পাহাড়
গড়িয়ে নীচে
মেমে যাচ্ছে
এই প্রবাহ। কাছাকাছি
দুটো ঝর্ণা
রয়েছে এ
স্থানে, প্রতিদিন
বহু সংখ্যক
পর্যটক এখানে
এসে ভীড়
জমান এবং
ঝর্ণার শীতল
পানিতে গা
ভিজিয়ে প্রকৃতির
সাথে একাত্ম
হন।
মারমা ভাষায়
এর নাম
রিছাং ঝর্ণা,
‘রি’ শব্দের
অর্থ পানি
আর ‘ছাং’
শব্দের অর্থ
গড়িয়ে পড়া। মূল
সড়ক হতে
রিছাং ঝর্ণায়
যাওয়ার পথে
চারিদিকের পাহাড়ী প্রকৃতি মনের মাঝে
এক অনুপম
অনুভূতির সৃষ্টি
করে।
ইচ্ছে করে
প্রকৃতির মাঝেই
কাটিয়ে দিই
সারাক্ষণ।
ঝর্ণা ছেড়ে
মন চায়
না ফিরে
আসতে কোলাহল
মূখর জনারণ্যে।
আলুটিলার সুড়ঙ্গ
বা রহস্যময় সুড়ঙ্গঃ
গা ছমছম করা
অনুভূতি নিয়ে
পাহাড়ী সুড়ঙ্গ
পথ বেয়ে
অন্ধকার পাতালে
নেমে যাওয়া
কল্পনার বিষয়
হলেও আলুটিলার
সুড়ঙ্গ পথ
কল্পনার কিছু
নয়।
আলুটিলা কেন্দ্রের
প্রধান আকর্ষণ
হচ্ছে এর
‘রহস্যময় সুড়ঙ্গ’। স্থানীয়
লোকের ভাষায়
‘‘মাতাই হাকর’’
যার বাংলা
অর্থ দেবগুহা। এ পাহাড়ের চূড়া
থেকে ২৬৬টি
সিঁড়ির নীচে
আলুটিলা পাহাড়ের
পাদদেশে পাথর
আর শিলা
মাটির ভাঁজে
গড়া এ
রহস্যময় সুড়ঙ্গের
অবস্থান।
গুহামুখের ব্যাস প্রায় ১৮ফুট আর
দৈর্ঘ্য প্রায়
২৮০ফুট।
প্রবেশমুখ ও শেষের অংশ আলো-আঁধারিতে আচ্ছন্ন। মাঝখানে
নিকষ কালো
গাঢ় অন্ধকার
এ গুহার
তলদেশ দিয়ে
প্রবাহমান শীতল জলের ঝর্ণাধারা।
গা ছমছম
করা অনুভূতি
নিয়ে এ
গুহায় প্রবেশ
করাটা একদিকে
যেমন ভয়সংকুল
তেমনি রোমাঞ্চকরও
বটে।
শুধু বাংলাদেশেতো
বটেই পৃথিরীর
অন্য কোন
দেশেও এ
রকম প্রাকৃতিক
সুড়ঙ্গ পথের
খুব একটা
নজীর নেই। অনন্য
সাধারণ এ
গুহায় মশাল
বা উজ্জ্বল
টর্চের আলো
ব্যতীত প্রবেশ
করা যায়
না।
মশাল পর্যটন
কেন্দ্রেই পাওয়া যায় ১০টাকার বিনিময়ে। গুহার
একদিকে ঢুকে
অন্যদিকে গিয়ে
বেরোতে সময়
লাগে মাত্র
১৫/২০মিনিট। উপমহাদেশের
একমাত্র প্রাকৃতিক
এ সুড়ঙ্গ
জেলার প্রধান
পর্যটন আকর্ষণ।
No comments:
Post a Comment